December 31, 2025, 10:42 pm

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন পোর্টাল
সংবাদ শিরোনাম :
চলতি বছরে মব সন্ত্রাসে নিহত ১৯৭ জন, মানবাধিকার পরিস্থিতি গভীর উদ্বেগজনক: আইন ও সালিশ কেন্দ্র রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বেগম খালেদা জিয়ার দাফন সম্পন্ন কুষ্টিয়ায় শ্বশুরবাড়ির উঠান থেকে জামাইয়ের মরদেহ উদ্ধার ভারতের শোকবার্তা পৌঁছাল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের হাতে মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় রাজশাহীতে ইন্তেকাল করেছেন বেগম খালেদা জিয়া, জিয়ার কবরের পাশেই দাফনের পরিকল্পনা কুষ্টিয়ার ৪টি আসনে ৩৩ প্রার্থীর মনোনয়ন দাখিল, কুষ্টিয়া–৪’এ বিএনপির দুই বিদ্রোহী এনসিপির সব কার্যক্রম থেকে নিজেকে নিষ্ক্রিয় ঘোষণা নুসরাত তাবাসসুমের সাতক্ষীরায় ভারত থেকে আমদানি ৮ হাজার ৬২২ টন, কমেনি মাষকলাই ডালের দাম ঘন কুয়াশায় সারাদেশে নৌযান চলাচল বন্ধ

৪ ডিসেম্বর খোকসা মুক্ত দিবস

হুমায়ুন কবির,  খোকসা/
৪ ডিসেম্বর কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলা মুক্ত দিবস। স্বাধীনতা সংগ্রামের চুড়ান্ত বিজয়ের বেশ কয়েক দিন পূর্বেই ৪ ডিসেম্বর পাক মিলিশিয়া ও তাদের দোষরদের পরাজিত করে খোকসা থানাকে মুক্ত করতে সমর্থ হয় এলাকার মাত্র ২২ জন মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা সংগ্রামের ৪৮ বছর পরও শহীদ ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারবর্গ উল্লেযোগ্য সরকারী সুযোগ -সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
’৭১ সালের এপ্রিল – জুন মাসে পাক হানাদার ও তাদের দোষর রাজাকার বাহিনী ধষণ, লুট, অগ্নিসংযোগ সহ নারকীয় অত্যাচারে খোকসা থানার সাধারন মানুষের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। এলাকার খাগড়বাড়ীয়া, ঈশ্বরদী, একতারপুর, বেতবাড়ীয়া, দশকাহনিয়া, মানিকাট সহ প্রায় ১০ টি গ্রাম জ্বালিয়ে দেয় পাকসেনা ও রাজাকারেরা। নারকীয় হত্যাযোগ্য তখন নিত্যকার ঘটনায় পরিনত হয়েছিল। খোকসা থানার পাকবাহিনী ও তাদের দোষরদের বড়মাপের ক্যাম্প ছিল তিনটি। শোমসপুর , মোড়াগাছা ও গনেশপুর। এগুলোর মধ্যে খোকসা রেলওয়ে ষ্টেশনের পাশে শোমসপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ক্যাম্পটি ছিল সর্ব বৃহৎ। এখানে সার্বক্ষনিক ভাবে ৭০/৮০ জন পাক মিলিশিয়া মোতায়েন রাখা হতো। এই ক্যাম্প থেকেই ষড়যন্ত্রের নীল নকশা  তৈরি করা হতো। বিভিন্ন গ্রাম তল্লাসী চলিয়ে সুন্দরী যুবতীদের আটক করে শোমসপুর ক্যাম্পে আনা হতো। খোকসা থানার তিনটি ক্যাম্পে মোট ৩৭৫ জন রাজাকার ও পাকসেনা ছিল বলে জানা যায়।
মুক্তিযোদ্ধারা এ সময় বেশ কিছু সংখ্যক সড়ক ও রেলসেতু উড়িয়ে দিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। কয়েক দফায় আক্রমন চালায় পাক মিলিশিয়াদের রাজাকার ক্যাম্পে। ২০ শে শ্রবন শুক্রবার ১৩৭৮ বাংলা তারিখে গভীর রাতে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার লুৎফর রহমানের নেতৃত্বে খোকসা ও কুমারখালী থানার সীমান্তবর্তী বসিগ্রাম রাজাকার কমান্ডার খেলাফত চেয়ারম্যানের বাড়ীতে ২০/২৫ জন মুক্তিযোদ্ধা অপারশেন চালায়। কিন্তু রাজাকারদের কাছে পরাস্থ হয়ে শহীদ হয় ৫ জন অকুতভয় মুক্তিযোদ্ধা। আহত হয় ৮ জন। শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা হলেন ইকবাল, আনসার, গোপাল, লুৎফর, কুদ্দুস।
বর্ষা মৌসুমের পর অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয়স্থল গুলোতে পাক মিলিশিয়াাদের আক্রমন ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে। ছোটখাটো প্রতিরোধ গড়ে তোলা ছাড়া এ সময় তেমন উল্লেখযোগ্য কোন সফলতা দেখাতে পারে নাই স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা।
’৭১ সালের ২ নভেম্বর গভীর রাতে খোকসা থানা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আলউদ্দিন খানের নেতৃত্বে রাজাকার কমান্ডার আব্দুল হাই সহ ৬ জনকে আত্মসমর্পন করানো হয়। এই দিন রাতেই ২২ জন মুক্তিযোদ্ধা ৬ টি দলে ভিভক্ত হয়ে খোকসা পুলিশ ষ্টেশনে আক্রমন চালায়। ৫৫ জন পুলিশ ও ১৩০ জন রাজাকারকে আতœ সমর্পন করিয়ে খোকসা থানা দখল করে নেয়। এখান থেকে দুই শতাধীক অস্ত্র ও বিপুল পরিমানে গোলাবারুদ উদ্ধার করে। কিন্তু লোকবল সল্পতার কারনে ৩ ডিসেম্বর প্রত্যুশেই আতœসমর্পনকারী খোকসা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল গনিসহ অন্যান্যদের নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা তাদরে ক্যাম্প মানিকাট জতিন্দ্রনাথ দত্তের বাড়িতে চলে যায়। ঐ দিন সকাল ১০ টায় পুনরায় মিলিশিয়া ও রাজাকাররা খোকসা থানা সদরে এসে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আলউদ্দিন খানের বসত বাড়ী মালিগ্রামে আক্রমনের পরিকল্পনা করে। মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্থানী সেনাদের এই পরিকল্পনার খবর জানতে পেরে শত শত জনতা সহ প্রতিরোধের জন্য অবস্থান নেয়। মিলিশিয়া ও রাজাকাররা এই খবর জানতে পরে মালিগ্রামের দিকে আগ্রসর না হয়ে শোমসপুরে ক্যাম্পে ফিরে যায়। ৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যা রাতেই মুক্তিযোদ্ধারা পুনরায় সু- গঠিত হয়ে খোকসা থানা ও শোমসপুর ক্যাম্প আক্রমন করলে রাতেই পাক সেনারা শোমসপুর ক্যাম্প গুটিয়ে নিয়ে খোকসা ত্যাগ করে। পরদিন ৪ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা আনুষ্ঠানিকভাবে খোকসায় বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরও পাকিস্থানী দোষর আলবদরদের মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম আন্তভূক্ত করতে একটি মহল তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। যুগ যুগ ধরে মুক্তিযোদ্ধাদের আন্তঃদ্বন্দের কারনে এই উপজেলার অবহেলিত ৬ টি শহীদ পরিবার সরকারী সাহায্যের নামে পেয়েছে শুধু সরকারী ভাতা। খোকসা উপজেলা হানাদার মুক্ত দিবস বিষয়ে খোকসা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার মোঃ ফজলুল হক বলেন, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের দায়িত্ব এখন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের। তিনি খোকসা উপজেলা হানাদার মুক্ত দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচীর আয়োজন করেছেন।
খোকসা উপজেলা হানাদার মুক্ত দিবস পালনের বিষয়ে খোকসা উপজলা নির্বাহী অফিসার ও খোকসা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ মেজবাহ্ উদ্দীন বলেন, মহামারি করোনার কারণে সীমিত পরিসরে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য পুষ্পমাল্য অর্পণ আলোচনা সভা, মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিচারণ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Comments are closed.

পুরোনো খবর এখানে,তারিখ অনুযায়ী

© All rights reserved © 2024 dainikkushtia.net
Maintenance By DainikKushtia.net